টাকার জন্য মামলা ঝুলিয়ে রাখেন স্বাস্থ্যের আইন শাখার ডিডি পরিমল

0 ৮,৬০৩

শামীম হোসেন::ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অধীনস্ত কর্মচারীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারী আচরণের অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইন শাখায় কর্মরত উপ-পরিচালক (ডিডি) ডা. পরিমল কুমার পালের বিরুদ্ধে। ওই শাখায় উপ-পরিচালকের কোন পদ নেই। তবুও, ওএসডি হয়ে প্রায় বছরখানেক ধরে তিনি শাখাটির সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। কমিশন বাণিজ্য, অধিদপ্তরের আওতাধীন সারাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জিম্মি করে অর্থ আদায়, অদক্ষতার কারণে মামলার দীর্ঘসূত্রিতা ও আদালত অবমাননার মত ঘটনা এই কর্মকর্তার দ্বারা ঘটছে। এছাড়া, তার হুমকি-ধমকিতে সাধারণ কর্মচারীরা সব সময় অভ্যন্তরীন বদলি ও নানা ধরনের শাস্তির আতঙ্কে থাকেন। তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্তৃপক্ষের কাছে নানাভাবে নালিশ জানালেও মেলেনি কোন সুফল। শেষে বাধ্য হয়ে ভুক্তভোগীরা স্বাস্থ্য মন্ত্রী, দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, উপ-পরিচালক ডা. পরিমল কুমার পাল আইন শাখায় সংযুক্তিতে কর্মরত থেকে দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যের মহোৎসবে মেতেছেন। তার এসব অপকর্ম যাতে ফাঁস না হয় সে জন্য তার একান্ত বিশ্বস্ত কর্মচারী ছাড়া অন্যদের দাপ্তরিক কাজ থেকে দূরে রাখেন। অথচ ওই শাখায় সংশ্লিষ্ট কাজের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত পদধারী কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। কাজ থেকে বিরত রেখে উল্টো তাদের সঙ্গে তিনি প্রতিনিয়ত অসদাচরণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে থাকেন।

অভিযোগে উল্লেখ আছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আইন শাখায় সহকারী পরিচালকের একটি পদ আছে। নিয়মানুযায়ী সকল চিঠিপত্র তার স্বাক্ষরে হওয়ার কথা। ওই পদে ডা. মো. আনোয়ার হোসেনকে পদায়ন করা হলেও তাকে কর্মহীন করে রেখে ডা. পরিমল কুমার পালই সকল চিঠিতে স্বাক্ষর করেন। উপ-পরিচালকের কোন পদ আইন শাখায় না থাকা সত্ত্বেও ডা. পরিমল কুমার দুর্নীতি, কমিশন বাণিজ্য, চুক্তিতে ফাইল থেকে মোটা অংকের টাকা আদায়ের জন্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ভুল বুঝিয়ে নিজেকে আইনের বিষয়ে বিশেষ জ্ঞানসম্পন্ন জাহির করে আইন শাখাকে ওএসডি সংযুক্তির মাধ্যমে আঁকড়ে ধরে রেখেছেন। অথচ, আইন শাখায় আইন উপদেষ্টার একটি পদ শূন্য অবস্থায় রয়েছে। যে পদে কিছু দিন পূর্ব পর্যন্ত আইনে উচ্চতর ডিগ্রীধারী কর্মকর্তা কর্মরত ছিলেন। ডা. পরিমলের কারণে বর্তমানে আইন শাখায় দূরাবস্থা চললেও তখন স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালিত হত।

আরো অভিযোগ করা হয়েছে, পরিমল কুমার একজন চিকিৎসক। আইন বিষয়ে তার কোন ধারণা ও পড়াশুনা নেই। যে কারণে না বুঝে তিনি আদালতের বিভিন্ন রায়কে ব্যাঙ্গ-বিদ্রূপ করে থাকেন। স্বাস্থ্য বিভাগের অনেক মামলায় আইন শাখার মতামত চাওয়া ফাইলগুলোর ক্ষেত্রে তিনি অদক্ষতাবশত নেতিবাচক কিছু বক্তব্য লিখে চরম জটিলতা সৃষ্টি করে আসছেন। বিজ্ঞ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রায়ে থাকা সত্ত্বেও ‘প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল কোন আদালতই না’, এমন মন্তব্য করে রায় বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যা উপস্থাপন করে দাপ্তরিক জটিলতা সৃষ্টি করে আসছেন। যার প্রেক্ষিতে প্রায় অনেক মামলাই আজ আদালত অবমাননার পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে।
অথচ, নীতিমালা অনুযায়ী- যে কোন সরকারি দপ্তরের বিষয়াদি সংক্রান্ত মামলার বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা এবং নিষ্পত্তির বিষয়ে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কর্তৃক আদেশের মাধ্যমে সকল ক্ষমতা প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ন্যাস্ত করা হয়েছে।

- Advertisement -

লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী দাবি করেছেন, ডা. পরিমল ইচ্ছাকৃতভাবে চলমান মামলাগুলো নিষ্পত্তির চেষ্টা করেন না। কারণ, মামলা চলতে থাকলে সরকারি আইনজীবী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অপারেশনাল প্লান বরাদ্দের মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া ল’ ফার্মকে দেওয়া ফি’র সিংহভাগ কমিশন হিসাবে আদায় করতে পারেন। এ কারণে ল’ ফার্মের আইনজীবীরাও তাকে নিয়ে বিরক্ত। অপরদিকে খুবই গোপনীয়তা রক্ষা করে চুক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন ফাইল থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে থাকেন ডা. পরিমল।

অভিযোগের শেষাংশে উল্লেখ আছে, ডা. পরিমল কুমার আইন শাখায় পদায়নের আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পার শাখায় কর্মরত ছিলেন। সেখানে চিকিৎসক বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে সাচিপ এবং বিএমএ’র নেতাদের সুপারিশ না শুনে যাদের কাছ থেকে টাকা পেতেন, তাদের পদায়ন করতেন। এই অবৈধ বাণিজ্যের কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কিছু চিকিৎসক তাকে মারধরের জন্য ধাওয়া করে। অধিদপ্তরে তার কর্মকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ করলে তাকে বদলি করে আইন শাখায় দেওয়া হয়। সেখানে গিয়েও অর্থের লোভে আইন শাখার কার্যক্রম ব্যাহত করছেন তিনি। সম্প্রতি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন এম.এল.এস.এস’র মামলায় হাইকোর্ট থেকে রায় পাওয়ার পরও ডা. পরিমলকে মোটা অংকের টাকা দিতে না পারায় আইন শাখা থেকে আদালতের রায়ের বিপক্ষে মতামত দেওয়া হয়। যার প্রেক্ষিতে আদালত অবমাননার অভিযোগে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালককে আদালতে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা চাইতে হয়েছে।

সকল অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডা. পরিমল কুমার পাল বলেন, যেসব অভিযোগের কথা বলা হয়েছে সবকিছুই উল্টো। আমি এই শাখায় থাকতেই চাই না। জোর করে থাকার তো প্রশ্নই আসে না। আমি সকল স্টাফদের আরও জোর করে কাজ করাই। মামলার কাজে আদালতের চাহিদা মত পূর্ণ সহযোগীতা দিয়ে থাকি। এখানে যে সহকারী পরিচালককে পদায়ন করা হয়েছে, তিনি যোগদানের পর থেকেই অসুস্থ। তাই তিনি অফিস করছেন না। কোন মামলা থেকে, কর্মচারী থেকে কিংবা আইনজীবীদের কাছ থেকে কমিশন নেওয়ার কথা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আমি এক কাপ চা-ও কারো কাছ থেকে খাই না। চেষ্টা করি যত দ্রুত সম্ভব মামলা নিষ্পত্তি করার।

Facebook Comments

Leave A Reply

Your email address will not be published.