নিউজ টাইমস্ থ্রিসিক্সফাইভ//
আজ বৃহস্পতিবার থেকে সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক চিকিৎসা প্রদান করবেন চিকিৎসকেরা। গত সোমবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ তথ্য জানান। দেশের ১২ জেলা ও ৩৯ উপজেলায় শুরুতে এই কার্যক্রম চালু হচ্ছে।
জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপাতালে সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত বিনামূল্যের রোগীদের দেখার পর বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত নিজ কক্ষেই সরকার নির্ধারিত ফির বিনিময়ে চিকিৎসাসেবা দিতে পারবেন চিকিৎসকেরা। এ জন্য ফিও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। পাইলট প্রকল্প হিসেবে এই সেবা চালু করছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুরুতে ১০ জেলা ও ২০ উপজেলায় এই কার্যক্রম চালুর পরিকল্পনা করা হয়। গতকাল বুধবার কয়েক দফা আলোচনার পর আরও দুই জেলা এবং ১৯ উপজেলা বাড়ানো হয়।
১২ জেলা সদর হাসপাতালের মধ্যে রয়েছে- মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, ফেনী, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, জামালপুর, ঝিনাইদহ, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও, কুড়িগ্রাম, ভোলা ও সুনামগঞ্জ জেলা সদর হাসপাতাল।
অন্যদিকে ৩৯ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা জেলার সাভার, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, টাঙ্গাইলের মধুপুর, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, ফরিদপুরের বোয়ালমারী, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, নোয়াখালীর সেনবাগ, চট্টগ্রামের পটিয়া, কুমিল্লার দাউদকান্দি, কক্সবাজারের পেকুয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ, বান্দরবানের লামা, জামালপুরের সরিষাবাড়ী, শেরপুরের নকলা, ময়মনসিংহের গফরগাঁও, নেত্রকোনোর দুর্গাপুর, যশোরের মনিরামপুর, মাগুরার শ্রীপুর, কুষ্টিয়ার কুমারখালী, যশোরের কেশবপুর, নওগাঁর সাপাহার, নাটোরের গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম, রাজশাহীর পবা, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, রংপুরের বদরগঞ্জ ও গংগাচড়া, নীলফামারীর ডোমার, বরগুনার আমতলী, বরিশালের আগৈলঝাড়া, ভোলার চরফ্যাশন, সুনামগঞ্জের ছাতক, মৌলভিবাজারের শ্রীমঙ্গল, সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিশ^নাথ এবং হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
- Advertisement -
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখার পরিচালক ডা. শেখ দাউদ আদনান আমাদের সময়কে বলেন, ‘তালিকা আগেই অনেকটা চূড়ান্ত করা হয়। তবে নানা কারণে মন্ত্রী ও মহাপরিচালকের কাছে তালিকাটি রাখা হয়।’
এদিকে অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, একজন চিকিৎসক সপ্তাহে দুই দিন সরকারি হাসপাতালে বৈকালিক স্বাস্থ্যসেবা দিতে পারবেন। এক্ষেত্রে অধ্যাপক পর্যায়ে ৪০০ টাকা, সহযোগী অধ্যাপক বা সিনিয়র কনসালট্যান্টরা পাবেন ৩০০ টাকা, সহকারী অধ্যাপক বা জুনিয়র কনসালট্যান্ট বা সমপর্যায়ের চিকিৎসকগণ পাবেন ২০০ টাকা করে।
তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফি কত টাকা হবে সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ কার্যক্রম কিছুটা ইতিবাচক হলেও তদারকি না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়তে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. আবু জামিল ফয়সাল।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা কোনো কিছুতে তদারকি নেই। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েক জেলায় হওয়ায় ভালো। তবে সমস্যাও আছে। ১০ টাকায় রোগীরা দিনের প্রথম ভাগে যে চিকিৎসা পেত, সেটিতে ব্যাঘাত হতে পারে। কারণ অনেক চিকিৎসক বিকালে প্রাইভেটে আসতে বলবেন।
আবু জামিল ফয়সাল বলেন, এই পদ্ধতিতে খুব বেশি উপকার আসবে না। অধ্যাপকেরা খুব বেশি সরকারি এসব হাসপাতালে বসবেন না। সবচেয়ে বেশি বসবেন জুনিয়র চিকিৎসকেরা। ফলে গরিব রোগীদের যে উন্নত চিকিৎসা পাওয়ার জন্য এটি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়, সেটি প্রথম দিকে কিছুদিন থাকলেও আস্তে আস্তে কমে যাবে। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে যে ফি দেওয়া হয়, সরকারিতে সেটি তুলনামূলক কম। আবার চিকিৎসকদের সঙ্গে দালালদের দৌরাত্ম্য বাড়বে, সরকারিতে চিকিৎসা দেওয়া হলেও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে বেসরকারিতে।